বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫২ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপিকে সংসদে যোগদানের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

তরফ নিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপিকে গণতন্ত্রের স্বার্থে জনমতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে সংসদে যোগদানের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন, কাজেই বিএনপি’র দুর্নীতির মামলা তার নিজস্ব গতিতেই চলবে।

তিনি বলেন, ‘যে কয়টা সিটে তারা (বিএনপি) জিতেছে। তারা যদি চায় তাহলে গণতন্ত্রের স্বার্থে তাদের সংসদে আসা প্রয়োজন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের কৃতকর্মের জন্য, দুর্নীতির জন্য যেসব মামলা হয়েছে সেসব মামলা তার আপন গতিতে চলবে। কেননা বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন।’

শেখ হাসিনা আজ বিকেলে রাজধানী বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দলের উপদেষ্টা পরিষদ এবং কার্যনির্বাহী সংসদের যৌথ সভার প্রারম্ভিক ভাষণে এ কথা বলেন।
নিজেদের দোষেই এবারের বিএনপি’র ভরাডুবি হয়েছে, এমন ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে হেরেছে এই দোষ তারা কাকে দিবে। দোষ দিলে নিজেদেরকেই দিতে হয়। কারণ, একটি রাজনৈতিক দলের যদি নেতৃত্ব না থাকে, মাথাই না থাকে তাহলে সেই রাজনৈদিক দল কিভাবে নির্বাচনে জেতার কথা চিন্তা করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি দলে পলাতক আসামী দিয়ে রাজনীতি করতে গেলে কি রেজাল্ট হতে পারে সেটাই তারা পেয়েছে। তবে, তাও এতটা হত না তারা যদি নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে মনোনয়ন বাণিজ্যটা না করতো। তাহলে হয়তো আরো ভাল রেজাল্ট করতে পারতো।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশটাতো ছোট সকলের খবরই জানা যায়- যেসব নেতারা হয়তো নির্বাচনে জয়ী হবার মত নেতা, তাদের বাদ দিয়ে মোটা অংকের টাকা যারা দিতে পেরেছে তাকে মনোনয়ন দিয়েছে। একই আসনে ৩ থেকে ৫ জন নেতা আবার সেই মনোনয়ন দেওয়া নিয়ে তাদের অফিসে যে মারামারি, ভাংচুর, জামা ছেঁড়াছেড়ি-তার থেকেতো মানুষ জানতেই পেরেছে যে, এদের চরিত্রটা কি।’
‘কাজেই এদের চরিত্র শোধরায়নি, বাংলাদেশের জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছে, যোগ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের মাঝে আজকে এই উপলব্ধি এসে গেছে যে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে তারা ভাল থাকে, তাদের জীবন-মান উন্নত হয়। দারিদ্র্যের কষাঘাতে তাদের জর্জরিত হতে হয় না। তারা শান্তিতে থাকতে পারে। তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটানা ১০ বছর হাতে সময় পেয়েছিল বলেই বাংলাদেশ আজকে সারাবিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকে ঘিরে জনগণের ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার উল্লেখ করে বলেন, এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় ছিল নারী, তরুণ এবং প্রথম ভোটার হওয়া ভোটার সহ সর্বস্তরের ভোটারদের মাঝে স্বতঃস্ফূর্ততা। আর ভোট দানের প্রতি তাদের আগ্রহ ও লক্ষ্যণীয় ছিল।
তিনি বলেন, ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, মেহনতী মানুষ থেকে ব্যবসায়ী সবার মনে একটা আকাঙ্খা ছিল- আওয়ামী লীগ আসলে তাঁরা ভাল থাকবে, দেশটা ভাল চলবে, দেশটা উন্নত হবে।
এবারের নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা গুটিকতক স্থানে বিএনপি-জামাতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির অভিযোগ এনে বলেন, ‘কোথাও তারা ব্যালট বাক্স ছিনতাই করতে গেছে, কোথাও তারা নির্বাচনটাকে বানচাল করার চেষ্টা করেছে এবং তাদের অপকর্মের জন্য বেশ কিছু প্রাণহানি ঘটেছে। যার মধ্যে আমাদের দলের নেতা-কর্মীরাও রয়েছে।’
তাঁর কাছে নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টার প্রমাণ রয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘তারা প্রচেষ্টা চালিয়েছিল যেকোনভাবে যেন নির্বাচনটা বানচাল করা যায়।’

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কারাবাস সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতি তারা করেছে, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেছে, এই মামলাতো আওয়ামী লীগের দেওয়া না। এটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দেওয়া। আর ঘুষ দুর্নীতি এবং মানি লন্ডারিং এরতো আন্তর্জাতিকভাবেই খবর বেরিয়েছে।’
আমেরিকা, কানাডা এবং সিঙ্গাপুরের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তেই এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে, এমনকি আমেরিকা থেকে এদেশে এসে এফবিআই সাক্ষ্যও দিয়ে গেছে, বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা শুধু এইটুকুই বলতে পারি আমরা যখনই সরকারে এসেছি দেশের জন্য দেশের জনগণের জন্য কাজ করেছি। আমরা কিন্তু কোন রিভেঞ্জ (প্রতিশোধ) নিতে যাই নি বা কাউকে কোন হয়রানি ও করতে যাইনি।’
যদিও বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর কেবল মাত্র তাঁর বিরুদ্ধেই ১২টি মামলা দেয় এবং পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেয় আরো ৫/৬টি মামলা, এরপর বিশ্ব ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতেরও কল্পিত অভিযোগ উঠেছিল, যেসব কেউই প্রমাণ করতে পারে নি, বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘সবগুলো চ্যালেঞ্জ আমরা মোকাবেলা করেছি এবং পদ্মাসেতুর দুর্নীতির অভিযোগটি আন্তর্জাতিকভাবেও তদন্ত হয়েছিল এবং সে তদন্ত করে তারা বলেছিল যে, সেখানে কোন দুর্নীতি হয় নাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে এতদূর আসায় তাঁদের ওপর জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস আরো দৃঢ় হয়েছে।
জনগণের স্বার্থ এবং কল্যাণের জন্যই আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনা করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গ্রামের মানুষ এবং তৃণমূলের জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তনই তাঁর নিজের এবং দলের রাজনীতির উদ্দেশ্য।’
এ সময় নৌকা মার্কায় ভোট প্রদান করায় তিনি সকল সর্বস্তরেরর মানুষের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আওয়ামী লীগের এই বিপুল বিজয় তাঁদের দায়িত্বকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘আরো পাঁচ বছরের জন্য আমরা ম্যান্ডেট পেলাম। আমাদেরকে এখন একটাই চিন্তা করতে হবে যে, আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছি সেগুলো যেমন বাস্তবায়ন করতে হবে এবং বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য আরো কী কী করতে পারি সেটাও সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে অর্জনগুলো ধরে রেখে আগামীতে আরো সামনে এগিয়ে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আমাদের সৌভাগ্য স্বাধীনতার রজতজয়ন্তীতে আমরা ক্ষমতায় ছিলাম। সূবর্ণজয়ন্তীও আমরা পালন করবো।’
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০ সালে মার্চ থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত মুজিব বর্ষ পালিত হবে। সারাদেশ ব্যাপী ও আন্তর্জাতিকভাবে একবছর ধরে এই উৎসব চলবে বলেও তিনি জানান।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com